"রাতের আকাশ ও রবের মহিমা: এক গভীর উপলব্ধি"


তখন প্রায় ১১টা বাজে, রাত ১১টা। ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। মহল্লার প্রায় প্রতিটি ঘরই অন্ধকার হয়ে গেল, দু-একটি বাদে (আইপিএস, জেনারেটর অথবা সোলার সিস্টেমের কারণে)। বহুদিন হলো এমন অন্ধকার দেখিনি। মাঝে মাঝে তো বিদ্যুৎ চলে গেলে টেরও পাই না, আইপিএস থাকার কারণে (আল্লাহ তায়ালা রিয়া থেকে হিফাজত করুন)। যেহেতু ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তাই ঘরের সবকটা বাতিই বন্ধ ছিল। কেন যেন বারান্দায় যেতে ইচ্ছে করছিল! তো একটু বারান্দায় গিয়ে বসলাম। আহ! রাতের অন্ধকার কত সুন্দর, নির্মল ও মলিন। আকাশের পানে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলাম অপলক দৃষ্টিতে। কী দেখলাম জানেন?

রাতের দ্বিপ্রহর হলেও আকাশটা তেমন অন্ধকার বা কালো নয়, কিছুটা নীলচে আভা আছে। আর নীলচে আভার মাঝে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘগুলো মনের সুখে আনন্দচিত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাতাসের সাথে গাঁ ভাসিয়ে দিচ্ছে। আর এই মেঘের ফাঁকে ফাঁকে মুক্তার ন্যায় ঝিকিমিকি করছে বেশ কয়েকটি 'তারা'। শীতল-স্নিগ্ধ বাতাস আঘাত হানছে আমার শরীরে। এ আঘাতে না আছে কোনো ব্যথা, না আছে কোনো দুঃখ। এ যেন এক স্বর্গীয় সুখ। বহুদিন হলো এমন সুখের দেখা পাইনি, এমন আকাশ দেখিনি, এমন স্নিগ্ধতা অনুভব করিনি।

সুবহানাল্লাহ! এই মনোরম দৃশ্য দেখে মনের মধ্যে এক ধরনের সতেজতা অনুভব করলাম।

আচ্ছা জানেন, এই অপরূপ দৃশ্যের কারিগর কে? কার হুকুম মেনে চলছে এই আকাশ, বাতাস, তারা, নক্ষত্র?

তিনি আমার মালিক, মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সকল সৃষ্টির স্রষ্টা, এক অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেন,

“বল, তিনিই আল্লাহ একক/অদ্বিতীয়।”

[সূরা ইখলাস (১১২), আয়াত: ০১]

আর এ কথা স্মরণে আসার সাথে সাথেই রব্বের শুকরিয়া আদায় করলাম। আর বান্দা যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকে তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাঁর বান্দার প্রতি নিয়ামত আরও বাড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন,

“যখন তোমার রব্ব ঘোষণা করেন: তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আরও বেশি দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে নিশ্চয় আমার শাস্তি হবে কঠোর।”

[সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ০৭]

কিভাবে নিয়ামত বাড়িয়ে দিলেন, জানেন?

নিয়ামতটা হলো এই যে, 'আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল যেন আল্লাহ তা'আলা আমায় দেখছেন। আমি যেন তা জোরালোভাবে অনুভব করছি। আল্লাহ তা'আলা যেন আমায় বলছেন,

“আর তোমার রব্ব সর্বদ্রষ্টা।”

[সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত: ২০]

আমি, এই অধমের কিছু উপদেশ অথবা পরামর্শ এই যে—

মাঝে মাঝে এমন পরিবেশে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকুন, ভাবুন, গভীর চিন্তা করুন। আধুনিকতার পরশে আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেছি যে, নিজেদের জন্য সময় বের করতে পারি না। আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে, তাঁর কালাম আল-কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে সময় পাই না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন—

“তারা কি দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কিভাবে উহা সৃষ্টি করা হয়েছে? আর আকাশের দিকে, কিভাবে এটিকে ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে, কিভাবে এটাকে স্থাপন করা হয়েছে? ভূমির দিকে, কিভাবে তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে!”

[সূরা গাশিয়া, আয়াত: ১৭-২০]

সুতরাং, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকুন, পাহাড়ের গায়ে দৃষ্টি দিন। আর ভাবুন, চিন্তা করুন এবং উপলব্ধি করুন রব্বের মহত্ত্বকে। এ সময় দো'আ করুন। দেখবেন এ দো'আ অন্য সময়ের দো'আর মতো হবে না। এ দো’আর ভাষা হবে স্পষ্ট, দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাস মিশ্রিত। অন্তরের গভীর থেকে আসবে এমন অনুভূতি, যা আর পাঁচটা অনুভূতির মতো নয়।


মন্তব্যসমূহ

Popular Posts

"তাওহীদ– আমার বেঁচে থাকার কারণ"

"Rat Race" —বিপর্যস্ত আত্মার খোঁজে