"Rat Race" —বিপর্যস্ত আত্মার খোঁজে




বর্তমান সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা একটা শিক্ষার্থীকে পরিণত করে একজন চাকর, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও অসামাজিক মানুষে।

এই শিক্ষাব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে ঠেলে দেয় এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে। আর এই প্রতিযোগিতাই ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় তার কৈশোর ও যৌবনের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে। তার চিন্তার জগতকে সংকীর্ণ করতে বাধ্য করে তার বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সমাজ। চিন্তার জগতকে আপনি প্রশস্ত করবেন– তা তো 'দূর কি বাত'। আপনি যদি বলেন, “আমি আমার চিন্তার জগৎ প্রসারিত করতে চাই”—তবে সেটি হবে এক রকম অপরাধ। আপনার পড়াশোনা হবে কেবল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য। আপনাকে শেখানো হবে কীভাবে ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’ মানুষদের সাহায্য করা যায়—কিন্তু আপনি নিজেই হয়ে উঠবেন সেই ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’।

 এই শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে বিসর্জন দিতে হয় জীবনের দীর্ঘ ২৮-৩০টি বছর। আর তারপর সফলতার নামে আপনার হাতে তুলে দেওয়া হয় আরেক নারকীয় সংগ্রাম—চাকরির যুদ্ধ। এই পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা আপনাকে দিনে দিনে বিচ্ছিন্ন করে দেয় আপনার প্রকৃত সত্তা থেকে। ভূলিয়ে দিবে সেই অসীম সত্তাকে, নিয়ে যাবে তাঁর থেকে যোজন যোজন দূরে।

আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সহযোগী কারা জানেন?
 –আপনার কাছের মানুষরাই।

আপনার বাবা-মা, নিকট আত্মীয়রাই আপনাকে "মানসিক বিকারগ্রস্ত" হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই 'নারকীয় রেইস' এ দাঁড় করিয়ে দিবে। বলবে– "দৌড়াও বাবা, দৌড়াও। আরও জোরে দৌড়াও। অমুকের ছেলে তমুকের চেয়ে বেশি জোরে দৌড়াতে হবে তোমায়।"

এভাবেই আপনি কৈশোর পেরিয়ে প্রবেশ করবেন যৌবনে। যৌবনের পবিত্র শক্তি আপনাকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। আপনি পৃথিবীটাকে দেখতে শুরু করবেন নতুন চোখে, নতুন চশমায়। তখন আপনার কাছে মনে হতে পারে—এই জগতটা কেবল একটি মরীচিকা। দেখবেন, সবাই দৌড়াচ্ছে সেই 'পুঁজিবাদী হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা'র পেছনে। আর সবাইকে দৌড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে তাদের বাবা-মা, যারা নিজেরাই একসময় হেরে গেছেন সেই দৌড়ে, ক্লান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।

আপনি তখন নীল জগতের নোংরা এক সুড়সুড়ির মোকাবিলা করবেন। বাঁচার চেষ্টা করবেন এসব নোংরামো থেকে। অনেক অনেক কষ্ট হবে, ক্লান্তি আসবে, হতাশা আসবে, আবার যুদ্ধে নেমে যাবেন। আপনি আপনার রব্বকে খুজবেন, তাঁর কাছে ফরিয়াদ করবেন। এভাবেই চলতে থাকবে আপনার যুদ্ধ।

কিন্তু এই অপরাজিত সমাজ আপনাকে এর কোনো সমাধান দেবে না, দেবে শুধু সুড়সুড়ি। এভাবে একদিন হয়তো যুদ্ধ করতে করতে আপনি হারিয়ে যাবেন গুনাহের অতল গহ্বরে। তখন হয়তো আপনার মা-বাবার, সমাজ আপনাকে সেই গহবর থেকে উঠানোর চেষ্টা করবে। হারিয়ে ফেলা যৌবনকে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করা হবে তখন। আপনার বিয়ের কথা চিন্তা করা হবে। বিয়ে হবে ঠিকই, কিন্তু বিয়ের সেই পবিত্র সুখ খুজে পাবেন কি?

তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবেন আপনি। উঠতে তখনও হয়তো পারবেন, তবে তা হবে আপনার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই।




৬ শাওয়াল, ১৪৪৬।

মন্তব্যসমূহ

Popular Posts

"তাওহীদ– আমার বেঁচে থাকার কারণ"

"রাতের আকাশ ও রবের মহিমা: এক গভীর উপলব্ধি"