"মাথিনের স্মৃতিতে শাপলা" (৫-৫-১৩)



মুজিব না শাপলা?

বারিন্দায় খেলছিলো। তখন হাতে একটা কয়েন পেলে তা ঢিল দিয়ে সঠিকভাবে ল্যান্ড করানো ছিল এক্সট্রা অর্ডিনারি কাজ, যাতে সে ছিলো পারদর্শী।

সাত বছর বয়সী বালক মাথিম। ১০-১২টা পর্যন্ত স্কুল। স্কুল থেকে আসার সময় ৫টাকার ঝালমুড়ি খেয়ে বাকি ৫টাকার একটা কয়েন নিয়ে খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরছিলো সে। তখনও ছোট্ট শিশুটি জানতো না কিছুই।

বিকেলে আজ আর মাঠে যাওয়া হলো না। তাদের বাসার নিচ তলার মাহদী ভাইকে নাকি মাদ্রাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। আসরের পর বাসায় এসে মাথিন আম্মুর উড়না ধরে আন্টিদের কথা শুনছে সে। মাহদী ভাইয়ের মা দিকবিদিকশূন্য হয়ে পড়েছে, তার সোনার টুকরা গেল কই? পরে জানতে পারলো মাদ্রাসা থেকে সবাই ঢাকা গেছে, ইসলাম ও আল্লাহর নবীর সম্মান রক্ষার্থে বেরিয়ে পড়েছে কুরআনের পাখিরা। 

সেই বিকাল থেকে মাথিন টিভির সামনে বসে। খালি দেখতে পাচ্ছে 'বড় মসজিদ' এর হুজুরদের মতো হাজার হাজার হুজুর। সে তার মাহদী ভাইকে খুঁজছে, পেলে আন্টিকে জানাবে— "আন্টি, ওইজে মাহদী হুজুরকে টিভিতে দেখা যায়।" সে মনে মনে ঠিকও করে রেখেছে এবার থেকে মাহদী ভাইকে মাহদী হুজুর ডাকবে।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়তে গেলো মাথিন, বড় মসজিদে। আজকে মসজিদে মানুষ কম, পরিচিত হুজুরের কণ্ঠ আজকে শুনতে পেলো না সে। যিনি নামাজ পড়িয়েছেন, তিনি আজকে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠেছেন কয়েকবার। মাহদী মনে মনে ভাবছে, "ছিহ! এত্তো বড় হুজুর আবার বাচ্চাদের মতো কাঁদে?"
সে বাড়িতে ফেরার পথে বুঝতে পারলো আজকের আকাশ বাতাসে অন্য রঙ। লাল আকাশ, শীতল বাতাস। সবাই চুপচাপ, মুখে সবার কালোমেঘ। আছে বৃষ্টির অপেক্ষায়।

রাতে বাবা বাড়িতে ফিরলে মাথিন জানতে চায়, "বাবা, টিভিতে আজকে কি হচ্ছে?"
বাবা বলেন, "ওটা তো ঢাকায় হচ্ছে বাবা। নবিজীকে নিয়ে কিছু খারাপ মানুষ পচা কথা বলেছেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে পচা কথা বলেছেন। তাই হুজুর, ছাত্র আর সাধারণ মানুষ আজকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ও আন্দোলন করছেন।"

মাথিনে চক্ষু লাল, সে শুধু এইটুকুই বুঝেছে তার প্রিয় নবীজীকে নিয়ে খারাপ লোকেরা কিছু বলেছে। সে তার উত্তপ্ত চোখের শিখাকে টিভির দিকে নিক্ষেপ করল। মনোযোগ দিয়ে দেখছে টিভির খবর।

ক্লান্ত শরীর ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে এক রক্তিম আকাশ তার চোখে ভেসে উঠল।

ঢাকায় তার আখিরাতের পথকে মসৃণ করতে রক্ত দিয়েছে হাজারো টুপিওয়ালা হুজুর। সে তখন বুঝেনি এসব। তবে এক যুগ পরে এসে সে তা বুঝতে পারছে। তার মাহদী হুজুরও ফিরে এসেছিলো। কিন্তু অনেক 'হুজুর' আর ফিরে আসেনি.....

মুজিব না শাপলা– এই খেলা সে ২৪ এর জুলাইয়েও খেলেছে। এখনও খেলছে...

     

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Popular Posts

"তাওহীদ– আমার বেঁচে থাকার কারণ"

"রাতের আকাশ ও রবের মহিমা: এক গভীর উপলব্ধি"

"Rat Race" —বিপর্যস্ত আত্মার খোঁজে